Sunday, January 17, 2016

পাশ্চাত্যের অন্যরা আনুগত্যের বাসনায় আমাদের সমাজে যেসব প্রথা ও রীতি-নীতির জন্ম দিয়েছে তার অন্যতম হলো ‌'এপ্রিল ফুল' উদ্‌যাপন। এ প্রথার অধীনে রয়েছে এপ্রিলের প্রথম তারিখ মিথ্যা বলে কাউকে বোকা বানানোর একটা রং-তামাশার খেলা ও আনন্দ উল্লাস। এপ্রিলের প্রথম তারিখ একটা বোকা উৎসব পালন করা। যেমন কেউ একজন তার ঘনিষ্ট কাউকে  খুবই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক একটি সংবাদ শুনিয়েছিল। অতঃপর তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর লোকটি বলল, আজ এপ্রিলের প্রথম তারিখ। তোমাকে আমি 'এপ্রিল ফুল' বানিয়েছি। বোকা বানিয়ে ইনজয় করছি। এভাবে এপ্রিলের প্রথম তারিখে মিথ্যা বলে কাউকে ধোঁকা দেয়া, আর ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর এই প্রয়াসকে শুধু বৈধ মনে করা হয়না বরং সেটাকে একটা কৃতিত্ব বলে গণ্য করা হয়। যে ব্যাক্তি যত সুনিপুন এবং চৌকসভাবে অন্যজনকে যত বড় ধোকা দিতে পারে ততই তাকে প্রশংসাযোগ্য এবং পহেলা এপ্রিল পালনে এর আনন্দ উদ্‌যাপনে যথাযোগ্য সফল বলে বিবেচনা করা হয়।
প্রতিটি মুসলিম মানব সন্তানের জন্য 'এপ্রিল ফুল' পালন যে রকম লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক তেমনি প্রত্যেক খৃষ্টান সম্প্রদায়ের জন্যও জঘন্য মানহানিকর। অন্তত যারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রতি সামান্য শ্রোদ্ধাবোধ দেখায়। তার পবিত্রতা ও সততার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে। এপ্রিল ফুল পালনের প্রধান ও বিশুদ্ধ কারণ ঊনবিংশ শতাব্দির খৃষ্টানদের বিখ্যাত বিশ্বকোষ ইনসাইক্লোপেডিয়া লারুস বর্ণনা করেছেন এবং সেটাকে অধিক বিশুদ্ধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। তা হলো প্রকৃত পক্ষে ১ এপ্রিল হলো সেই তারিখ যাতে পারস্যবাসী এবং ইহুদিদের পক্ষ থেকে হযরত ঈসা (আঃ)-কে ঠাট্টা-বিদ্রুপের টার্গেট বানানো হয়েছিল।
১ এপ্রিল হলো মানব ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম পাশিবক হত্যাকান্ডের দিন। ১৯৪২ সালের এই দিনে সংঘটিত হয় এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। মুসলিম জাতির এক সময়ের গৌরদিপ্ত দেশ স্পেন। মুসলমানরা ইউরোপের স্পেন জয় করেছিল এবং আটশ বছর তারা সেখানে শাসন করেছিল। কর্ডোভা গ্রানাডা সহ বিভিন্ন নগরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বড় বড় মসজিদ, পাঠশালা। ইতিহাসের বিখ্যাত আলেমগণ এখানে কোরআনের দরস্‌ দিয়েছেন। জগৎ বিখ্যাত গ্রন্থাদি রচনা করেছেন। বিতারিত খৃষ্টান গোষ্ঠি তারিক বিন জিয়াদের হামলার প্রতিশোধ ও পুনরায় স্পেন দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে এবং নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। খ্রিষ্টান রাজা ফার্ডিনান্ড বিয়ে করে পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলাকে। এই শয়তান নারীর কুটকৌশলে ফার্ডিনান্ড তার লক্ষাধিক সৈন্য নিয়ে  আক্রমন করে বসে স্পেনের রাজধানী গ্রানাডা। মুসলমানরা অতর্কিত এই আক্রমনে সীমাহিন বিপযর্স্ত হয়ে পড়ে। ফলে মুসলমানরা প্রতিশোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে। একদিকে কিছু মুসলমান পাইকারী  গণহত্যার শিকার হচ্ছে আর কিছু এদিক-সেইদক ছুটাছুটি করছে। অন্যদিকে রাণী ইসাবেলা ও রাজা ফার্ডিনান্ড মুসলিমমুক্ত স্পেন গড়ার মানসে ষড়যন্ত্রের কালো হাত বিস্তার করে এবং চাতুরির আশ্রয় নেয়।
তারা মুসলমানদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করে যারা বাঁচতে চাও তারা অস্ত্র ফেলে মসজিদে আশ্রয় নাও কিংবা জাহাজে আরোহণ কর। তোমাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সরলমনা মুসলমান-শত্রুকে বিশ্বাস করে মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং জাহাজকে সহায় মনে কর। আর চিরায়ত মুসলিম শত্রু কৃষ্ণ আত্মার গোষ্ঠী খ্রিস্টান রাণী মসজিদের চারদিকে আগুন ধরিয়ে দেয়, জাহাজগুলো ডুবিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে ভষ্মিভুত হয়ে যায় মুসলমানদের দেহ। অথৈ সাগরের পানিতে ডুবে যায় হাজার হাজার মুসলমান। খুবই করুণ ও অমানবিক নৃশংসতার কারেণ প্রাণ হারালো অগণিত মুসলমান। মুসলমানদের ঐ করুণ পরিণতি দেখে নরপশু ফার্ডিনান্ড  উল্লাসে ফেটে পড়ে আর স্ত্রী রাণী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে বলে, "হায় মুসলিম, তোমরা এতই বোকা!" বছর ঘুরে এপ্রিল আসে। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের এ দিন (১ এপ্রিল) সমাগত হয়। আর ক্রিষ্ঠ জগৱ এ মর্মানিন্তক ঘটনা ও মুসলমানদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর জঘন্য পাপের ও অনৈতিক কাজের সম্পৃক্ততা ছাড়াও এমন কিছু ঘটনার স্মৃতিচারণ করে, যার ভিত্তি মূর্তপূজা ও আল্লাহর মহান পয়গম্বরের সাথে বেয়াদববি পূর্ণ আচরণ। তাছাড়া এসব তাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিশেষণ বাদ দিরেও স্পেনে মুসলিম শাসনের পতন সময়কার '১ এপ্রিল' রাণী ইসাবেলা ও রাজা ফার্ডিনান্ড কৃর্তক মুসলমানদের যেভাবে হত্যা করা হয়, সে করুণ ইতিহাস স্রণে রাখলেও 'এপ্রিল ফুল' কোন মুসলমানকে আনন্দিত করতে পারে না।
এখন সময় এসেছে কোন মসুলমান যেন এসব কু-প্রথার মাধ্যমে আনন্দিরত হয়ে, প্রতারিত না হয়। বরং প্রত্যেককেই এর সঠিক ইতিহাস, এর উৎস ও বিকাশের কাহিনী অবগত করানো হয়। প্রতিটি মুসলমান যেন 'এপ্রিল ফুল' ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে। পশ্চিমাদের অন্ধ অনুসরণের বাসনা আমাদের সমাজে যেসব কুপ্রথা রীতি-নীতি জন্ম দিয়েছে তার অন্যতম হল এপ্রিল ফুল। এই প্রথার অধীনে রায়েছে এপ্রিলের প্রথম তারিখে মিথ্যা বলে কাউকে ধোঁকা দেওয়া, আর ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর এই প্রয়াটাকেই শুধু বৈধ বলে মনে করা হয় না বরং সেটাকে একট বড় কৃতিত্ব বলে গণ্য করা হয়। যে ব্যক্তি যত বড় সুনিপুন চৌকসভাবে অন্যজনকে যত বড় ধোঁকা দিতে পারে ততই তাকে প্রশংসাযোগ্য ও পহেলা এপ্রিল পালনে এর আনন্দ উদ্‌যাপনে তাকে যথাযোগ্য সফল বলে বিবেচনা করা হয়।
এই প্রথা যার উৎস ও মৌলিক ভিত্তি হল মিথ্যা, ধোঁকা আর কোন নিষ্পাপ -নিরাপরাধ ব্যক্তিকে অনর্থক বোকা বানানোর উপর, সেটা নৈতিকভাবে যে নিন্দনীয় তাতো সুস্পষ্ট।
এই প্রথার সুচনা কিভাবে হয়েছে? তার সম্পর্কে ইতহাসবিদদের ব্যাখ্যা-বিবৃতি খুবই বিরোধমূলক। কোন কোন লেখকের কথা হল যে, ফ্যান্সে সপ্তদশ শতাব্দীর পূর্বের সময় নববর্ষের সূচনা জানুয়ারির পরিবর্তে এপ্রিলের মাধ্যমেই করা হতো। এই মাসকে পারস্যের লোকেরা দেবী ভোনাসের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করে পবিত্র বলে গণ্য করতো। গ্রীক (ইউনানী) ভাষায় ভোনাসের অনুবাদ (এ্যাফরোডাইট) করার মত সম্ভবত গ্রীকক নাম থেকে উদ্ভব করে পরিবর্তিতভাবে মাসের নাম এপ্রিল রাখা হয়েছে।
(এনসাইক্লোপডিয়া ব্রিটেনিকা, ২৯২ পৃঃ ৮ম খন্ড)
এক্ষেত্রে এনসাইক্লোপেডিয়া লারুস যে কারণটা বর্ণনা করেছে সেটাকেই মূলত বিশুদ্ধ বলে স্মীকৃতি দেয়া হয়েছে। সেই কারণটা এটাই যে, প্রকতিপক্ষে ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের বিবৃতি বর্ণনার আলোকে পহেলা এপ্রিল হল সে তারিখ যে তারিখে পারস্যবাসী এবং ইহুদীদের পক্ষ থেকে হযরত ঈসা (আঃ) কে ঠাট্টা-বিদ্রুপের টার্গেট বানানে া হয়েছিল। এ সম্পর্কে লারুসের ইঞ্জিলের মধ্যে তার ভাষ্য এমন পাওয়া যায় যে, প্রথমে  হযরত ঈসা (আঃ) কে ইহুদী সর্দার ও ধর্মীয় পণ্ডিতদের সবোর্চ্চ আদালতে হাজির করা হয়। তারপর তাকে পিলাতসের আদালাতে প্রেরণ করা হয়। এরপর পিলাতস তাকে হিরোডসের আদালে পাঠিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত হিরোডস তাকে পুনরায় বিচার কার্য সম্পাদনের নিমিত্তে পিলাতসের আদালতে প্রেরণ করে।

লারুসের ভাষ্য হল হযরত ঈসা (আঃ) কে এক আদালত হতে অন্য আদালতে প্রেরণ করার উদ্দেশ্যে হল তার সাথে পরিহার করা, তাকে নিয়ে ঠাট্ট-বিদ্রুপ করা, তাকে দুঃখ ও কষ্ট দেওয়া। আর এই ঘটনা যেহেতু পহেলা এপ্রিলে সংঘটিত হয়েছে সে জন্য এপ্রিল ফুলের প্রথা বাস্তবিকভাবেই সেই লজ্জা জনক ঘটনার স্মারক।

1 comment:

  1. Very nice blog and informative post. Keep posting and keep updating.
    ❤️

    For JSC exam preparation, SSC exam preparation & HSC exam preparation. To get exclusive model test with answer....
    Visit...
    www.OSC24.blogspot.com

    ReplyDelete